ফতুল্লায় ড্রামে নয়নের মরদেহ : পরকীয়া থেকে নৃশংস খুন, স্ত্রী কন্যাসহ গ্রেপ্তার ৭


Kamrul Islam Sohel প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৮, ২০২৫, ৮:৫৯ অপরাহ্ন / ১০০০
ফতুল্লায় ড্রামে নয়নের মরদেহ : পরকীয়া থেকে নৃশংস খুন, স্ত্রী কন্যাসহ গ্রেপ্তার ৭

 

নারায়নগঞ্জ নিউজ এক্সপ্রেস :
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পরকীয়ার জেরে মো. নয়ন (৪৮) নামের এক অটোচালককে নৃশংসভাবে হত্যা করে মরদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখার ঘটনায় নয়নের স্ত্রীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আদালত গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

পুলিশ জানায়, গত ৫ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফতুল্লা থানাধীন পশ্চিম দেলপাড়া মির্জা বাড়ি এলাকার আকিল উদ্দিনের পাঁচতলা ভবনের চতুর্থ তলায় নয়নকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ৬ অক্টোবর সকালে তার দুই পা ছাড়া দেহ পাওয়া যায় ফতুল্লার উত্তর শিয়াচর এলাকার তক্কারমাঠের কাছে একটি ফাঁকা জমিতে রাখা নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতরে। একইদিন নয়নের দুইটি বিচ্ছিন্ন পা ও হত্যার আলামত একটি তোশকের ভিতর পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় পিলকুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গলির পাশে।
নিহত নয়ন শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার কানারগাঁও গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি বর্তমানে ফতুল্লার পাগলা নন্দলালপুর মসজিদ গলিতে বসবাস করতেন।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. আব্দুস সালাম (৭৭) বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পরপরই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের নির্দেশে ফতুল্লা থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) তারেক আল মেহেদী এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার “ক” সার্কেল মো. হাসিনুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—সাবিনা ওরফে সাবরিনা (৩৮) – নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী, রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেল – সাবিনার পরকীয়া প্রেমিক, চয়ন (৩৮), জুয়েল (২৮), নোমান ওরফে মানিক (২৮), সুমাইয়া (২০) ও সানজিদা ওরফে সাজু (১৮)
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, নিহত নয়ন জীবিকা নির্বাহ করতেন অটোরিকশা চালিয়ে। তার দুইটি সংসার ছিল। প্রথম স্ত্রীর নাম সাহিদা বেগম এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম সাবিনা। সাবিনার আগের সংসারে দুই মেয়ে—সুমাইয়া ও সানজিদা।
প্রায় তিন বছর আগে নয়ন মাদক মামলায় কারাগারে যান। এ সময় তার স্ত্রী সাবিনা রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর নয়ন জামিনে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন এবং স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। এতে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়।
হত্যার দিন অর্থাৎ ৫ অক্টোবর দুপুরে, রাসেল সাবিনার ফ্ল্যাটে এলে নয়নের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সাবিনা ও রাসেল নয়নকে ঘরের এক কক্ষে আটকে ফেলে লোহার রড ও ধারালো ছোরা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।
এরপর পরদিন (৬ অক্টোবর) সাবিনা, রাসেলসহ সহযোগী আসামি চয়ন, জুয়েল, নোমান, সুমাইয়া, সানজিদা, পলাতক সামির ও আরও দুই-তিনজন মিলে হত্যার বিষয়টি গোপন করতে নয়নের দেহের দুই পা হেক্সব্লেড দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে। পরে মরদেহের অংশগুলো আলাদা স্থানে ফেলে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
গ্রেপ্তারের পর আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত সুমাইয়া ও সানজিদাকে ২ দিনের এবং বাকিদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পরকীয়ার টানাপোড়েন এবং পারিবারিক কলহ থেকেই এই নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যার পেছনের আরও উদ্দেশ্য ও সংশ্লিষ্টদের শনাক্তে তদন্ত চলছে।