
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ। বাজারে গিয়ে এখন আর আগের মতো ঝুড়ি ভর্তি করে কেনাকাটা করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই নির্ধারিত বাজেট নিয়ে বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার সব করতে পারলেও বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আনতে অসহায়। সরকারের প্রশাসনের তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজের ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়—সবজি, মাছ, ডিম, মুরগি থেকে শুরু করে চাল-ডাল পর্যন্ত সব কিছুর দাম বেড়েছে। কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, আলু, টমেটোসহ প্রতিটি সবজির কেজি প্রতি দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। শীত মৌসুম ঘনিয়ে এলেও সবজির দাম এখনো সাধারণের নাগালের বাইরে। অনেকেই মাংস খাওয়া এখন বিলাসিতা মনে করছেন।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কথা হয় গৃহিণী রোকসানা বেগমের সঙ্গে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতিদিন বাজারে গেলে মনে হয় যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। ৫০০ টাকায় এখন কিছুই কেনা যায় না। সবকিছুর দামই বাড়ছে। ১ হাজার টাকায় দুই-তিনটি আইটেম কেনার পর আর টাকা থাকে না। সরকার আমাদের এই কষ্টের খবর নেয় না।
একই বাজারে কথা হয় রিকশাচালক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনে ৭০০-৮০০ টাকা কামাই করি, কিন্তু পরিবারের জন্য বাজার করতে গিয়ে দুই দিনের আয় আগেই শেষ হয়ে যায়। মাছ-মাংস এখন বিলাসী জিনিস মনে হয়। কোরবানির ঈদ ছাড়া গরুর মাংস খাওয়া কল্পনাই করা যায় না। সরকার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও বাজারদর নিয়ন্ত্রণে যেন অসহায়।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকেই পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে—তারা বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করছেন।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী আবু তালেব বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকলে আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারি না। সরকার জায়গামতো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়বেই। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না হলে বাজারে দাম কখনোই স্থিতিশীল হবে না।
আরেক ব্যবসায়ী রহমান মিয়া বলেন, পাইকারি বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট অনিয়ন্ত্রিতভাবে দাম বাড়ায়। আমরা বাজারে গিয়ে টাকার ঘাটতিতে পড়ি। তাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হয়, ফলে খুচরা বাজারে দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না। সরকার যদি শক্ত পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্যই স্বস্তি আসবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পণ্যের সরবরাহ চেইনে অসঙ্গতি ও মনিটরিংয়ের ঘাটতিই বাজার অস্থিরতার মূল কারণ। নিয়মিত বাজার তদারকি এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
ক্রেতারা আশা করছেন, আসন্ন রোজা ও মৌসুমকে ঘিরে যেন নতুন করে দাম না বাড়ে, বরং নিত্যপণ্যের বাজারে দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
আপনার মতামত লিখুন :